মঙ্গলবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৫, ০১:৪৯ পূর্বাহ্ন
ভয়েস নিউজ ডেস্ক:
সবচেয়ে কম সময়ের জন্য মন্ত্রিপরিষদ সচিব ছিলেন কবির বিন আনোয়ার। তিনি মাত্র ১৯ দিন এ পদে দায়িত্ব পালন করেন। কম সময়ের দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী। তিনি এ পদে ছিলেন ১ মাস ৪ দিন। আবু সোলায়মান চৌধুরী ৩ মাস ২ দিন এ পদে থেকে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কর্মকর্তারা এ তথ্য জানিয়েছেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব হচ্ছে প্রশাসনের শীর্ষ পদ। প্রশাসন ক্যাডারের সবচেয়ে সিনিয়র কর্মকর্তাকে এ পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরে এ পদের সমমানে মুখ্য সচিবের পদ সৃষ্টি করা হয়।
গতকাল মঙ্গলবার ২৪তম মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসেবে মো. মাহবুব হোসেনের আদেশ জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তিনি চলতি বছর ১৩ অক্টোবর চাকরি থেকে অবসরে যাবেন। সেই হিসেবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ না পেলে তিনি হবেন ১০ মাসের মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব পদে দীর্ঘ সময় থেকে রেকর্ড গড়েছেন এম কেরামত আলী। তিনি ৪ বছর ১১ মাস ২৯ দিন মন্ত্রিপরিষদ সচিব ছিলেন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪ বছর ৭ মাস ২২ দিন এ পদে ছিলেন মোহাম্মদ আইয়ুবুর রহমান। ৪ বছর ৭ মাস ৯ দিন থেকে এ তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে রয়েছেন মো. মাহবুবউজ্জামান। দেশের প্রথম মন্ত্রিপরিষদ সচিব এইচ টি ইমাম ৪ বছর ১ মাস ১১ দিন এ পদে ছিলেন। হাল আমলের মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা এবং মোহাম্মদ শফিউল আলমও দীর্ঘ সময় এ দায়িত্ব পালন করেছেন। মোশাররাফ ৪ বছর ২৬ দিন এবং শফিউল ৪ বছর এ দায়িত্ব পালন করেন। গত মাসে বিদায় নেওয়া খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম দায়িত্ব পালন করেন ৩ বছর ১ মাস ২৭ দিন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব পদে নিয়োগ দেওয়ার পর সাধারণত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়। খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, মোহাম্মদ শফিউল আলম ও মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা নির্ধারিত সময়ের পর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছিলেন। কিন্তু পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব থেকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব করা হলেও কবির বিন আনোয়ারকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়নি।
সাধারণত মন্ত্রিপরিষদ সচিবকেই বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী হিসেবে সরকার নিয়োগ দেয়। সম্প্রতি মুখ্য সচিব আহমেদ কায়কাউসকে এ পদে নিয়োগ দেওয়ার পর আর কোনো সুযোগ নেই। কবির বিন আনোয়ার ১৫ ডিসেম্বর এ পদে যোগ দেন। ১৯ দিনের মাথায় গতকাল মঙ্গলবার এ পদ থেকে তিনি অবসরে যান।
ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ১ মাস ৪ দিন মন্ত্রিপরিষদ সচিব ছিলেন। তিনি ২০০২ সালের ২ এপ্রিল এ পদে যোগ দেন। বহাল ছিলেন ৬ মে পর্যন্ত। এরপর তিনি মুখ্য সচিব পদে যোগ দেন। নতুন পদের কারণেই ড. কামাল সিদ্দিকী মন্ত্রিপরিষদ সচিবের পদ ছেড়ে যান। চারদলীয় জোট সরকারের প্রশাসন সাজাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন ড. সিদ্দিকী। চাকরি ছাড়ার পর বাংলাদেশি এ অর্থনীতিবিদ অস্ট্রেলিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছেন। এই ক্যারিয়ার সিভিল সার্ভেন্ট বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশ নেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ তিনি নড়াইলের সাবডিভিশনাল অফিসার (এসডিও) ছিলেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তাকে খুলনার ডিসি নিয়োগ করা হয়।
৩ মাস ২ দিন মন্ত্রিপরিষদ সচিব ছিলেন আবু সোলায়মান চৌধুরী। ২০০৬ সালের ৩ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ পদে দায়িত্ব পালন করেন। ৩ মাস ১৮ দিনের মন্ত্রিপরিষদ সচিব ছিলেন সৈয়দ আহমদ। মাত্র ৯ মাস মন্ত্রিপরিষদ সচিব থেকেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন ড. আকবর আলি খান। কৃতী এ অর্থনীতিবিদ পরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা পদে যোগ দেন এবং প্রধান উপদেষ্টার পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলে পদত্যাগ করেন।
দীর্ঘ সময় দায়িত্ব পালন করে রেকর্ড সৃষ্টিকারী এম কেরামত আলী এ পদে দায়িত্ব পালন করেন ১৯৭৭ সালের ১৫ জুলাই থেকে ১৯৮২ সালের ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত। চাকরি থেকে অবসরের পর এ আমলা রাজনীতিতে যোগ দেন। ১৯৯০ সালে সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য কেরামত আলী এবং অন্য সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব এম কে আনোয়ারকে এরশাদ জমানায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার অভিযোগে কালো তালিকাভুক্ত করে। পরে তারা আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র কিনে ১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে চান। কিন্তু শেখ হাসিনা সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের সিদ্ধান্ত মেনে তাদের মনোনয়ন দেননি। তারা রাতারাতি বিএনপিতে যোগ দেন এবং নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়ী হন। তারা দুজনই ১৯৯১ সালের বিএনপি সরকারের মন্ত্রী হন। কেরামত আলী বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, ডাক-তার ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় এবং ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন।
১৯৯২ থেকে ’৯৬ পর্যন্ত আইয়ুবুর রহমান ৪ বছর ৭ মাস ২২ দিন থেকে এ তালিকায় দ্বিতীয়। ১৯৮২ থেকে ’৮৬ সাল পর্যন্ত ৪ বছর ৭ মাস ৯ দিন দায়িত্ব পালন করে দীর্ঘ সময় থাকার তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে রয়েছেন মো. মাহবুবউজ্জামান।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার আগে মো. মাহবুব হোসেন জ¦ালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব ছিলেন। একই দিনে অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. খায়রুজ্জামান মজুমদারকে সচিব পদে পদোন্নতি দিয়ে জ¦ালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের সচিব নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
নতুন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগে সিনিয়র সচিবের দায়িত্ব পালন করে আসছেন ২০২২ সালের ২ জানুয়ারি থেকে। তার আগে তিনি ছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব। অতিরিক্ত সচিব ছিলেন স্থানীয় সরকার বিভাগে।
বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের অষ্টম ব্যাচের কর্মকর্তা মাহবুব হোসেন সরকারি চাকরিতে যোগ দেন ১৯৮৯ সালের ২০ ডিসেম্বর। চাকরি জীবনে বিভিন্ন সময়ে তিনি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা কমিশন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার বিভাগে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। জাতীয় পরিকল্পনা ও উন্নয়ন একাডেমির প্রশিক্ষক, স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের উপপ্রধান (জেন্ডার), ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সচিব এবং বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্টের পরিচালক (উন্নয়ন ও পরিকল্পনা) পদেও তিনি কাজ করেছেন।
বরিশাল রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ (বর্তমানে বরিশাল ক্যাডেট কলেজ) থেকে এসএসসি এবং বরিশাল বিএম কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন মাহবুব হোসেন। পরে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞানে পড়ালেখা করেছেন। তার বাড়ি বরিশালের মুলাদী উপজেলার পাতারচর গ্রামে। ব্যক্তিগত জীবনে দুই সন্তানের জনক।
ভয়েস/আআ/সূত্র: দেশ রূপান্তর